জুলাই বিপ্লব ২০২৪ বাংলাদেশ রচনা। জুলাই বিপ্লব রচনা

 


ভূমিকা

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়, যা পরে "জুলাই বিপ্লব" নামে পরিচিতি লাভ করে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে উৎপত্তি হওয়া এই বিপ্লব অল্প সময়ের মধ্যেই এক গণজাগরণে রূপ নেয়। কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যারা বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির বৈষম্যমূলক রূপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। সরকারের দমননীতি ও গণহত্যার মুখে অবশেষে এ আন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে একটি স্বৈরাচারী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে এবং এ বিপ্লব জাতির ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আন্দোলনের পটভূমি

২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রসমাজ রাজপথে নামলে, তা জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সরকার তখন কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও, ২০২৪ সালে উচ্চ আদালত সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করে পুনরায় কোটা ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেয়। এতে দেশজুড়ে ছাত্র ও তরুণ সমাজের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আবারও নেতৃত্বে আসে এবং রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়।

বাংলা ব্লকেড ও দমন-পীড়ন

জুলাই মাসে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি “বাংলা ব্লকেড” নামে পরিচিতি পায়। আন্দোলন ঠেকাতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায়। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকার কারফিউ জারি করে এবং দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা চালায়।

গণহত্যা ও শহীদদের আত্মদান

সরকারের দমননীতি পরে এক নির্মম গণহত্যায় পরিণত হয়। পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সহায়তায় সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে হামলা চালানো হয়। আন্দোলনের শহীদদের মধ্যে আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধ বিশেষভাবে জাতির বিবেককে নাড়া দেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দমন অভিযানে ১৫৮১ জন প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে ১২৭ জন ছিল শিশু।

এক দফা দাবি ও চূড়ান্ত আন্দোলন

সারা দেশে যখন দমন-পীড়ন ও রক্তপাত চলছে, তখন আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে। “দফা এক, দাবি এক—শেখ হাসিনার পদত্যাগ” স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজপথ। লাখো ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়।

সরকার পতন ও ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন

আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ পায় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডও আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ্জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। জনগণের চাপ, আন্তর্জাতিক চাপ ও গণহত্যার বিচারের ভয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশত্যাগে বাধ্য হন।

উপসংহার

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব ছিল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো ঘটনা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে শুরু হওয়া এই অভ্যুত্থান প্রমাণ করে দেয়—সাধারণ জনগণ ও তরুণদের সম্মিলিত শক্তির কাছে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারে না। এই বিপ্লব শুধু একটি সরকারের পতনই ঘটায়নি, এটি জাতিকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার স্বাদ এনে দেয়। শুরু হয় নতুন এক গণতান্ত্রিক অধ্যায়ের, যেখানে ন্যায়, মানবতা ও সমঅধিকারের জয়গান গাওয়া হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url